পেটের দায় বড় দায়, কিন্তু সেখানে সন্তান স্নেহও কি হার মানে? হাতে চাল-ডাল কেনারও পয়সা নেই। সংসারের চারিদিকে ছড়িয়ে অভাবের চিহ্ন। সেই অভাব সহ্য করতে না পেরেই নিজের তিনদিনের পুত্র সন্তানকে বিক্রি করে দিলেন বাবা। তবে বিক্রি করার কথা অস্বীকার করেন নবজাতকের বাবা ইব্রাহিম।
ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার টেংরা গ্রামে। এই ঘটনার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। এমন ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে পুরো এলাকায়। সন্তান বিক্রির খবর পেয়েই ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান শ্রীপুর মডেল থানা পুলিশ।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চিলমারী থানার কাঁচকলা এলাকার সামছুল হকের ছেলে ইব্রাহিম স্ত্রী লাবণী ও দুই সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শ্রীপুর উপজেলার টেংরা গ্রামের ( গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র) সংলগ্ন রশিদের বাড়িতে বসবাস করছেন। ইব্রাহিম পেশায় রাজমিস্ত্রি তার স্ত্রী লাবনী গৃহিণী। তাদের একটি চার বছরের কন্যা সন্তান ও দুই বছরের ছেলে সন্তান রয়েছে।
গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায় একই এলাকার নিঃসন্তান দম্পতি রুবেল মিয়া ও দিনার সাথে একশত পঞ্চাশ টাকা দলিলের মধ্যে লিখিতভাবে নিজের সন্তানকে ভরণ পোষণ করতে না পারায় সজ্ঞানে বিনা টাকায় চুক্তিপত্র করে ইব্রাহিম। কিন্তু গত রবিবার (২৮ মার্চ) ইব্রাহিমের আত্মীয় সেলিনার মাধ্যমে সন্তানটিকে উত্তরা আজিমপুরের বাসিন্দা মৃত মহর আলীর ছেলে রফিকের কাছে লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার
হতভাগ্য বাবা ইব্রাহিম বলেন, গত বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) বাড়িতে তার স্ত্রী একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। ‘আমার ক্ষমতা নেই ছেলেকে ভালোভাবে মানুষ করার। ওর ভালো ভবিষ্যতের জন্যেই সন্তানকে অন্য জায়গায় দিয়ে দিয়েছি ।’ সন্তান বিক্রি করে আমি টাকা আমি খাব না, যাদের সাথে চুক্তি হয়েছিল তারা নেইনি ’
স্থানীয় বাসিন্দাদের জানিয়েছেন, ওই দম্পতির আরও দুই সন্তান আছে। নিঃসন্তান দম্পতির সাথে চুক্তি করার পরও তাদেরকে সন্তান না দিয়ে অন্য ব্যক্তির নিকট টাকার লোভে বিক্রি করে দিয়েছেন।
দিনার জানান, আমার কোন সন্তান না থাকায় তাদের সাথে আমার লিখিত চুক্তিবদ্ধ হয়, চুক্তিবদ্ধের পর থেকে গর্ভবতী মায়ের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি।
শ্রীপুর থানার এসআই মোহসীন জানান, সরেজমিনে গিয়ে নবজাতককে পাওয়া যায়নি। ঢাকা আজমপুরে রফিক নামের এক ব্যক্তির কাছে নবজাতক রয়েছে।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা মোস্তারী জানান, সন্তান বিক্রি করার ঘটনাটি শুনিনি, এবিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।